Advertisement

আমাদের কথা

বাংলা বাঙালির মাতৃভাষা। আমাদের প্রাণের ভাষা। প্রত্যেক ভাষার মত এই ভাষারও রয়েছে বিভিন্ন ধারা। অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আমরা তাকে দেখি। ভিন্নতা রয়েছে বাচনভঙ্গিতে, রয়েছে শব্দের উচ্চারণে এবং অর্থগত তাৎপর্যে। সেই সব ভিন্নতা স্বত্তেও এই ধারাগুলোর মধ্যে রয়েছে গভীর নাড়ির টান। সেই টানই জন্ম দিয়েছে বাঙালি জাতিসত্তার। তারই সুত্র ধরে জন্ম নিয়েছে ভাষার ভিত্তিতে এক রাষ্ট্র-চেতনার। অধুনা বাংলাদেশ তারই ফসল। 

বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রচেতনাই পৃথিবীর বুকে জন্ম দিয়েছে এক জাতিরাষ্ট্রের। সে এক অনন্য ইতিহাস, বাঙালির গর্বের ইতিহাস। এই গর্বিত ইতিহাসের ধারক ও বাহক হয়েও রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতালিপ্সার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কারণে সেই গর্বিত বাঙালি আজ নিজভূমে যেন প্রবাসী হয়ে আছে। এঘটনা বাঙালির কাছে গভীর দু:খের, ও প্রগাঢ় যন্ত্রণার।

বাঙালির এই জাতিসত্তার আধুনিক রূপ গড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কলকাতা অঞ্চলের প্রচলিত কথ্য ভাষার। দীর্ঘদিন কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হওয়ার কারণে এই অঞ্চল আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষার ও শিল্প-সংস্কৃতির ছোঁয়া যেমন পেয়েছে, তেমন পেয়েছে রাজানুকূল্য। সেকারণেই এই অঞ্চলের ভাষা লাভ করেছে আধুনিক ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের পরম মমতা ও স্নেহের পরশ। এমনই একজন প্রবাদপ্রতিম পুরুষ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তার হাতেই কলকাতার আঞ্চলিক ভাষা নবজন্ম লাভ করেছে, তা সকলেরই জানা। তাঁর সীমাহীন সহচর্যে এই ভাষাই বিদ্যাশিক্ষা ও শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার যোগ্য হয়ে ওঠে। যা আধুনিক বাংলা ভাষা নামে পরিচিত। 

এভাবেই শুরু হয় বাংলা ভাষার নতুন রূপে জয়যাত্রা। ক্রমে কলকাতার এই আঞ্চলিক ভাষা বিদ্যাশিক্ষার বাহন হওয়ার কারণে দ্রত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা বাংলায়। জড়িয়ে যায় জীবনজীবিকার সঙ্গেও। ফলে এই ভাষার গুরুত্ব বেড়ে যায় সীমাহীন ভাবে। এরপর থেকে আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে কলকাতার ভাষাই হয়ে ওঠে আম-বাঙালির প্রমিত ভাষা, কাজের ভাষা।

এরপর লেখাপড়া জানা মানুষের সংখ্যা যত বাড়ছে, কলকাতার ভাষার দাপট তত বাড়ছে। অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার তত কমে আসছে। আস্তে আস্তে মানুষের কথ্য ভাষার জায়গাও দখল করেছে কলকাতার এই প্রমিত ভাষা। মানুষের স্মৃতি থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে অন্যান্য আঞ্চলিক তথা কথ্য ভাষার নিজস্ব শব্দ ভান্ডার ও তার অমূল্য ঐতিহ্য।

পরিস্থিতি এখন জায়গায় গিয়ে দাড়িয়েছে যে, মানুষ ভুলতে বসেছে, যুগ যুগ ধরে অঞ্চলভিত্তিক মানুষের শিল্প-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক কথ্য ভাষার নিজস্ব শৈলী ও তার ভিত্তিভূমি অঞ্চলভিত্তিক (কথ্য ভাষার) অমূল্য শব্দভান্ডার। আমাদের আশংকা এখনি তাকে সংরক্ষণ না করতে পারলে এই শব্দগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই বাঙালির সংস্কৃতি ও তার ভিত্তিভূমিকে সংরক্ষণের তাগিদেই আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ। 'কথাভিধান' নামক আঞ্চলিক ও কথ্য শব্দের (যা ক্রমশ হারয়ে যাচ্ছে) ওয়েব সংকলন। 

আমাদের আবেদন, আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস, এই বিশাল দায়িত্ব পালনে নিশ্চিত ভাবে ব্যর্থ হবে, যদি না আপনাদের সহযোগিতা পাই। 

তাই আসুন হাতে হাত মেলাই। একটু একটু করে গড়ে তুলি এক বোধিবৃক্ষ। যা আমাদের সংস্কৃতির শিকড়কে জীবন সুধা যুগিয়ে যাবে অনন্তকাল। আমরা ঋণমুক্ত হব ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে।

আপনার জানা আঞ্চলিক ও কথ্য ভাষার শব্দ যা অব্যবহারের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে তাকে উদ্ধার করে আপলোড করে দিন আমাদের এই সংকলনে। আপলোড করতে এখানে ক্লিক করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। আপনার এই অবদান এই সংকলন শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করবে। অপণনার অবদান সংরক্ষণ হলো কিনা দেখুন এখানে ক্লিক করে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ